Sunday, June 2, 2013

Pakistani Documents Shows Jamaate Islami was Involved in War Crimes

পাকিস্তানের দলিলেও জামায়াত দায়ী

রাজীব আহাম্মদ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি শাসকদের তৈরি দলিলেও রয়েছে জামায়াত নেতাদের ভূমিকার কথা। একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে প্রতি মাসে দু'বার ইয়াহিয়া খানের কাছে গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠাত পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 'ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান' নামের সেই প্রতিবেদনে জামায়াত নেতাদের পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফোর্টনাইট প্রতিবেদনে পূর্ব পাকিস্তানের পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু রিপোর্টের তথ্যও উপস্থাপন করা হয়।

ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান দলিলে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা হিসেবে বলা হয়। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফকে উল্লেখ করা হয় রাজাকার বাহিনীর উদ্যোক্তা হিসেবে।

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় ভাগে পাঠানো ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান দলিলে নিজামীর বিভিন্ন বক্তৃতা ও বিবৃতির কথা উল্লেখ করা হয়। নিজামী ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে 'বদর দিবস, পাকিস্তান ও আলবদর' শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, '...দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানের কিছু মুনাফিক (মুক্তিযোদ্ধা) তাদের (ভারতের) পক্ষ অবলম্বন করে ভেতর থেকে আমাদের দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মোকাবিলা করে তাদের সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করেই পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে; শুধু পাকিস্তান রক্ষার আত্মরক্ষামূলক প্রচেষ্টা চালিয়েই এ পাকিস্তানকে রক্ষা করা যাবে না।' তিনি এ লেখার মাধ্যমে বদর বাহিনীকে আক্রমণাত্মক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।

গণহত্যায় জড়িত থাকা ও গণহত্যায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তানে অক্টোবরের প্রথমভাগের প্রতিবেদনে নিজামীর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। বক্তব্যে নিজামী বলেন, 'আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনার সহযোগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে।' তিনি তার লেখায় মুক্তিযোদ্ধাদের মুনাফিক হিসেবে আখ্যা দিয়ে পাকিস্তান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। ওই সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের 'দেশদ্রোহী' 'ভারতের দালাল' আখ্যা দিয়ে খতমের আহ্বান জানান।

'ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান'-এর অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগের প্রতিবেদনে (১৩ নভেম্বর ১৯৭১ স্বরাষ্ট্র সচিব স্বাক্ষরিত) নাম রয়েছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, তিন নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ, মকবুল আহমাদ, মাওলানা আবদুস সুবহান, তিন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা ও এটিএম আজহারুল ইসলামের। নাম রয়েছে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের দুই সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের ও মীর কাসেম আলীর। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ব্যক্তিরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেন। ঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠনে সহায়তা করার পাশাপাশি এসব বাহিনীর নেতৃত্বও দেন তারা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একাত্তরের ১৪ জুন জামালপুর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় নিজামী বলেছিলেন, ইসলাম রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এ জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। জামায়াতের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যায় নিজামীকে বদরবাহিনীর প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয় (মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা)।

পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নিজামী বলেছিলেন, ' ... ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরা দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ' (দৈনিক সংগ্রাম, ৮ সেপ্টেম্বর)।

মুজাহিদ ছিলেন আলবদর বাহিনীর অন্যতম সংগঠক। ১২ আগস্ট ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রাম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে। ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান প্রতিবেদন অনুযায়ী, '৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ২৫ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সম্মেলনে মুজাহিদ পাকিস্তানের ছাত্র-জনতাকে দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) 'খতম' করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

১৯৭১ সালের বদর দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, 'বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু লোক এখনও পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী কাজ করছে। জনগণ তাদের সম্পর্কে সচেতন।' তিনি এদের খতমের আহ্বান জানান (৮ নভেম্বর ১৯৭১, দৈনিক আজাদ)।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সমর্থনে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান শান্তিবাহিনীর প্রধান সমন্বয়ক ও জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। মকবুল আহমাদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় শান্তি কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪৩০)।

মকবুল আহমাদ '৭১ সালের ১০ আগস্ট রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামের ডিউটি অফিসার (ইনচার্জ) ফজলুল হককে লেখা এক চিঠিতে ফেনীর তাকিয়াবাড়ীর মাওলানা সৈয়দ ওয়ায়েজউদ্দিনকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ জন্য তিনি ফেনী শহর রাজাকার কমান্ডার হানিফ ও উপদেষ্টা মাওলানা মোস্তফাকে চট্টগ্রামে পাঠান। পরে ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে ওয়ায়েজউদ্দিনকে একটি জিপে তুলে করে নিয়ে যায় রাজাকাররা। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মকবুল আহমাদের হাতে লেখা সে চিঠিটি বাংলায় অনুবাদ করে বিলি করে। তবে এ প্রসঙ্গটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। (তথ্য সূত্র : ফেনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সংবাদ)।

ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান প্রতিবেদন অনুযায়ী, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি আশরাফ আলীর তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। ময়মনসিংহ জেলা শান্তি কিমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিনকে সহায়তা করেন তারা।

Source: http://www.samakal.com.bd/details.php?news=14&action=main&view=archiev&y=2012&m=12&d=16&option=single&news_id=313981&pub_no=1258