Thursday, September 1, 2011

BNP's Pride Sylheti Young Leader Illias Ali

শনিবার |১৫ অক্টোবর ২০১১ |
তিনি চাঁদাবাজ ও মোগল সম্রাট :মকবুল
লিয়াকত শাহ ফরিদী, সিলেট ব্যুরো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার পর আবারও আলোচনার ঝড় তুললেন সাবেক সাংসদ ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়া। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি এম ইলিয়াস আলীকে চাঁদাবাজ উল্লেখ করে ফের আলোচনায় এসেছেন তিনি। প্রয়াত সাইফুর রহমানকে ২০০৫ সালে 'সিলেটের সম্রাট' বলে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন মকবুল হোসেন। ২০০৬ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীকেও কটাক্ষ করেন তিনি। ওই সময় ইলিয়াস আলী মকবুল হোসেনের পক্ষে থাকলেও এবার তার মুখ থেকেই 'চাঁদাবাজ' ও 'মোগল সম্রাট'-এর অভিযোগ শুনতে হলো তাকে। গত ১১ অক্টোবর সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমাবেশ সামনে রেখে ইলিয়াস কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মকবুল হোসেন। এ বিষয়ে ইলিয়াস আলী বলেন, লেচু মিয়া সিলেট বিএনপির কেউ নন। তার কথা বলার অধিকার নেই। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় মকবুল হোসেনের বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার পর সিলেটজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মকবুলের বক্তব্য সিলেটে ছিল 'টক অব দ্য টাউন'। এদিকে একটি সূত্র বলছে, জামায়াতি ষড়যন্ত্রে বিএনপি ও ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

সাবেক সাংসদ ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন শুক্রবার সমকালকে বলেন, সাবেক এমপি পরিচয়ে গত ১১ অক্টোবর চারদলীয় জোটের জনসভায় অংশ নিয়ে মঞ্চে বসেছিলাম। তিনি বলেন, মহাসমাবেশের জন্য ২ কোটি টাকা ইলিয়াস আলী উঠালেও খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা। বাকি টাকা কোথায় গেল এই প্রশ্ন তোলাই আমার 'অপরাধ' হয়েছে। তিনি বলেন, সত্য বলতে ভয় পাই না। সাইফুর রহমানকেও ডরাইনি, ইলিয়াস আলীকে ভয় পাব কেন? আমি তার খাই না পরি। ইলিয়াস আলীর মতো আয়বিহীন রাজনৈতিক নেতাদের বর্জন করা উচিত বলে মনে করেন মকবুল। তিনি বলেন, তারা সমাজ, রাজনীতির শত্রু। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সঙ্গে আমার সমস্যার পর ইলিয়াসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে দেখলাম তিনি 'মোগল সম্রাট'। তার আয়ের নিজস্ব উৎস নেই। বিএনপি ও খালেদা জিয়ার নাম ভাঙিয়ে তিনি চাঁদাবাজি করেন। ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণেরও অভিযোগ আনেন মকবুল। তিনি বলেন, কোনো ভদ্রলোক ইলিয়াসের সঙ্গে চলতে পারে না। এ কারণে গত ৬ বছর ইলিয়াসের বাড়িতে যাইনি। সত্য কথা বললে, খরচের হিসাব চাইলে তার সঙ্গে ঝগড়া লেগে যায়। সিলেটে খালেদা জিয়ার রোডমার্চ ও জনসভায় কত টাকা খরচ হয়েছে আর কত টাকা চাঁদা উঠেছে_ এ হিসাব চাইতেই তিনি আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে বলেন, 'আমি ইলিয়াস জেলা বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় নেতা কাউকে হিসাব দেয় না। আপনি এখন যেতে পারেন।'

মকবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। মূলত তিনি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। প্রথম জীবনে তিনি বিসিএস প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন। টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসক থাকাকালে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়ী হওয়ার পর তিনি রাতারাতি ধনকুবেরে পরিণত হন। মকবুল হোসেন তার 'বাংলাদেশ ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ ট্রানজিশন ফ্রম সিভিলিয়ান টু মিলিটারি রুল' গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে (২০০১ সালে প্রকাশিত) 'জিয়ার শাসনামল অবৈধ' বলে উল্লেখ করেন। গ্রন্থটির মিলিটারি রুল ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ শিরোনামাঙ্কিত ৩নং অধ্যায়ে বলেছেন, '১৯৭৮ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আইনগত ও সাংবিধানিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শহীদ জিয়া ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তার সেনাবাহিনী প্রধানের পদ ছাড়েননি। কিন্তু সংবিধানের ৩৬ ধারার ৫নং অনুচ্ছদে আছে, একজন ব্যক্তি জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন না, যদি তিনি দেশের কোনো সরকারি অফিসে সুবিধাভোগী হন। এ কারণে শহীদ জিয়ার ওই শাসন আমল ছিল অবৈধ।'

১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন মকবুল হোসেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে পাউন্ড-ডলার চোরাচালানের অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হন। ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন মকবুল। ২০০৫ সালে সাইফুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত হন।

এদিকে নতুন করে ইলিয়াস আলীকে 'চাঁদাবাজ' ও 'মোগল সম্রাট' বলে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। বিএনপির সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ-পরবর্তী জনসভার জন্য ইলিয়াস আলীকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দেন বলে দাবি করেন মকবুল। ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জনসভায় উপস্থিত থাকলেও তাকে বক্তব্য দেওয়া দূরের কথা, পরিচয়ও করিয়ে দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এতে তিনি প্রচণ্ড অপমান বোধ করেন, মানসিক কষ্ট আর ক্ষোভ প্রশমন করতে পারছেন না। এ জন্য তিনি সরাসরি দায়ী করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে।

মকবুল বলেন, আমি দলের মনোনয়নের তোয়াক্কা করি না। মরহুম সাইফুর রহমান আমার ক্ষতি করতে পারেননি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং চারদলীয় জোট সরকারের সময় ইনাম চৌধুরী, ইফতেখার চৌধুরীর পরিবার আমার পেছনে লাগলেও ক্ষতি করতে পারেনি। আমি মাসে সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিই। এছাড়া আমার প্রতিষ্ঠান লার্জ টেক্স-পেয়ার ইউনিট (এলটিইউ) একটি মানসম্মত প্রতিষ্ঠান। মহাসমাবেশ আয়োজনে অন্তত দুই কোটি টাকা চাঁদা তুলে ৭০ লাখ খরচ করে বাকি টাকা ইলিয়াস আলী আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন মকবুল। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার পর জিজ্ঞেস করেছিলাম, টাকা কোন খাতে খরচ হয়েছে। উত্তর পাইনি।

বিএনপিতে বারবার বহিষ্কৃত এবং বারবার সমাদৃত সাবেক এমপি মকবুল কোনোবারই বিএনপির টিকিটে পাস করতে পারেননি। গত চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ইলিয়াস আলী ও মকবুল হোসেন দু'জনই এমপি ছিলেন। তৎকালীন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানের সঙ্গে ইলিয়াস আলীর বিরোধ যখন তুঙ্গে তখন মকবুল ইলিয়াসের পাশে ছিলেন। এবার পাল্টে গেছে দৃশ্যপট।


গত ১৫ বছরের মধ্যে ইলিয়াস আলী ১৫ লাখ টাকা রোজগার করতে পেরেছেন কি-না সে প্রশ্ন মকবুলের। ইলিয়াস আলী এবং তার স্ত্রী কীভাবে দুটি প্রাডো গাড়ি চালান, ইলিয়াস কীভাবে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হলেন, কীভাবে বনানীতে ৬ তলা বাড়ি তৈরি করছেন, এত সম্পদ তার কীভাবে হলো_ এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন মকবুল।

ইলিয়াস আলী সমকালকে বলেন, এসব ডাহা মিথ্যা কথা। মকবুল সিলেট বিএনপির কেউ নন। এমন বক্তব্য দেওয়ারও তার অধিকার নেই। এটা তার রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, মহাসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এসব উপ-কমিটির মাধ্যমে মহাসমাবেশের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।