Saturday, October 1, 2016

BNP's Fake Investigation about 21 Aug Grenade Attack

Prothom Alo

জোট আমলে বারবার সাজানো তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২১-০৮-২০১০
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় শুরু থেকেই হোতাদের আড়াল করতে তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তদন্তের নামে বিভিন্ন সময় নানা ‘আষাঢ়ে গল্প’ হাজির করে প্রথম থেকেই বিষয়টিকে বিতর্কিত করার কাজ শুরু হয় সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে।
তখন জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সাংসদ জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে বক্তৃতা-বিবৃতিতে হামলার শিকার আওয়ামী লীগের দিকেই সন্দেহের আঙুল তোলে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভারতকেও দায়ী করেছিল। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার নেপথ্যে তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর ছাড়াও জোট সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কারও কারও ভূমিকা ছিল বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে। প্রথমে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। কয়েক দিন পর মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তরিত হয়।
পার্থকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন: শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানোর অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৫ আগস্ট শৈবাল সাহা পার্থ নামের নিরীহ এক যুবককে ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পার্থ যেহেতু ভারতে লেখাপড়া করেছেন, তাই তাঁকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে প্রমাণের জন্যও তখন অসামরিক একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয় এবং জোট সরকারের সমর্থক বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রচার করা হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে জামিন পেয়ে সাত মাস পর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন পার্থ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে টানা পাঁচ দিন চোখ বেঁধে রাখা হয়। ব্যাপক নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ধানমন্ডি থানায় সোপর্দ করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার: ঢাকার মগবাজার এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোখলেছুর রহমানকেও এই মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁকে দুই দফা রিমান্ডেও নেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডি পুলিশ গ্রেনেড হামলায় তাঁকে জড়াতে না পেরে সাক্ষী হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল।
জজ মিয়া উপাখ্যান: ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে সিআইডি আটক করে। ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে ২৬ জুন জজ মিয়াকে দিয়ে আদালতে সাজানো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। কথিত এই জবানবন্দিকে ভিত্তি করে তদন্তের নামে ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রচার করেছিলেন মামলার তত্কালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ও তত্কালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। তাঁরা ওই বছরের নভেম্বরে আবুল হাসেম রানা ও শফিক নামের আরও দুই যুবকের কাছ থেকে প্রায় একই রকম সাজানো জবানবন্দি আদায় করেন।
সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও ওই সাজানো ছকে কথিত তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই গল্প সাজানোর ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন। তিনি প্রথম আলো ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাত্কারে বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সিআইডি তাঁর পরিবারকে মাসে মাসে ভরণ-পোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি।
২০০৮ সালের ১১ জুন অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তত্কালীন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি) জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, অতীতে মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সঙ্গে জড়িত সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা (রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই তিন কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন। পরে এই তিনজনের বিরুদ্ধে সিআইডি বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন।

BNP Leadership Cannot Deny Responsibility for 21 Aug Grenade Attack

Prothom Alo

মন্তব্য প্রতিবেদন

দায় এড়াতে পারেন না বিএনপি-নেতৃত্ব


মতিউর রহমান | তারিখ: ২১-০৮-২০১০
বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘটনাবলির মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাটি ছিল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। এই হামলায় জড়িত জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেই শনাক্ত হয়। সে সময়েই এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।
পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন যে ওই হামলার জন্য আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন, তাও এখন প্রমাণিত সত্য। কিন্তু এখন মামলাটির অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসছে, শুধু আবদুস সালাম পিন্টুই নন, তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। অন্তত বাবর যে প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচাতে তখন তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাতে আর সন্দেহের অবকাশ নেই।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আরও বড় বা গুরুত্বপূর্ণ কেউ ওই হামলার নেপথ্যে ছিলেন কি না? বা, আগে থেকে হামলার ঘটনা জানতেন কি না, বা পরে প্রকৃত সত্য জেনেও ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে সায় দিয়েছিলেন কি না? তবে এমন কারও নাম যদি বেরিয়েও আসে, আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না—বর্তমান তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সমাবেশে সেই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কারও সম্পৃক্ততার প্রমাণ যদি মেলে, তাহলে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে কতিপয় ব্যক্তিবিশেষ নয়, তৎকালীন সরকারের অনেকেই ওই নৃশংস হামলায় জড়িত। কারণ ইতিমধ্যে তৎকালীন তিনজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেছেন, কীভাবে গ্রেনেড সরবরাহকারী তাজউদ্দিনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রধান নেতারা অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক। আহত ব্যক্তিদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাঁদের অনেকেই আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পর তৎকালীন জোট সরকারের নেতারা জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিজেরাই ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারপর মামলার তদন্ত নিয়ে যে কত রকম গল্প বানানো ও প্রচার করা হয়েছিল, সেসব তো দেশবাসীর জানা হয়ে গেছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার শুধু বিভ্রান্তিকর প্রচারই চালায়নি, ২১ আগস্ট মামলাটির তদন্তের নামে কার্যত সুদূরপ্রসারী একটি ষড়যন্ত্রকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সশস্ত্র বাহিনী-সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে গ্রেনেড হামলার ঘটনার নেপথ্যের অনেক কথাই বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তবে তারও আগে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনার পর থেকে, প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধানে বহু নতুন তথ্যসহ প্রায় পুরো ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক তত্পরতার বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছিল। জোট সরকার জেনেশুনে যে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকৃত আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করেছিল, তদন্তকে উল্টোপথে পরিচালনা করেছিল—সেসব তখনই আমরা প্রথম আলোতে তুলে ধরে দেশবাসীকে জানিয়েছিলাম। এখন বিলম্বে হলেও তদন্তে আরও সত্য বের হয়ে এসেছে।
আমরা আশা করব, সিআইডি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাসম্ভব দ্রুত এই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেবে। এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করে ভয়ংকর এই হামলার হোতা ও নেপথ্যের চক্রান্তকারীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে।
আমরা জানি, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্রে (জেআইসি) মুফতি হান্নান ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলেন। সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু তখন মুফতি হান্নানকে এই মামলার আসামি করা বা তাঁর কাছ থেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি মুফতি হান্নান গ্রেনেড আক্রমণকারী ও সহযোগী হিসেবে যাঁদের নাম প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদেরও গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাঁরা তখন প্রকাশ্যেই সক্রিয় ছিলেন।
মুফতি হান্নান ওই সময়ে অর্থাৎ বিগত জোট সরকারের আমলেই জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের কাছে ২১ আগস্টের হামলা সম্পর্কে যেসব তথ্য ও বর্ণনা দিয়েছিলেন, তা আমাদের হাতে রয়েছে। এসব তথ্যের সঙ্গে পরে দুই দফা আদালতে দেওয়া হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মিল পাওয়া যায়। মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গির দেওয়া স্বীকারোক্তি এবং শেখ হাসিনাকে চারবার হত্যাচেষ্টার ঘটনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসহ আরও প্রতিবেদন নিয়ে ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট পুরো চার পৃষ্ঠার বিশেষ প্রথম আলো প্রকাশিত হয়েছিল। তারও আগে ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে এই ভয়ংকর ঘটনা নিয়ে অনেক বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে হামলাকারী এবং এর নেপথ্যের ব্যক্তি ও শক্তির মুখোশ উন্মোচনের প্রয়াস চালানো হয়।
২০০৭ সালের অক্টোবরে র‌্যাব মুফতি হান্নানের সহযোগী নয় জঙ্গিকে অস্ত্র, গ্রেনেড, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। এঁদের মধ্যে ২১ আগস্টের হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল ও জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন। মুফতি হান্নান এবং এই দুজনসহ ছয় জঙ্গি ওই বছরের নভেম্বরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এঁদের জবানবন্দি যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনা, গ্রেনেড সরবরাহ, আক্রমণ ও আক্রমণে সহায়তাকারী ২৭ জনের নাম বেরিয়ে এসেছিল। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে। অবশ্য এর আগে তাঁকে একবার ধরে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার চাপে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। হামলার তিন দিন আগে সাবেক এই উপমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় জঙ্গিরা এক পরিকল্পনা বৈঠক করেছিল বলে মুফতি হান্নান আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন। আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় অপরাধী হিসেবে যাঁর নাম এসেছে, তাঁকে ধরে আবার ছেড়ে দেওয়াটা ছিল নজিরবিহীন। তার ওপর মামলাটি এমন চাঞ্চল্যকর এবং ব্যক্তিটি সাধারণ কেউ নন যে ভুল করে বা না জেনেশুনে ধরা হয়েছিল।
সিআইডির তদন্তে গ্রেনেড আক্রমণে সরাসরি অংশগ্রহণকারী হিসেবে শনাক্ত হওয়া বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদের দুই সদস্য মুরসালিন ও মুত্তাকিন এখন ভারতের তিহার জেলে বন্দী। নাশকতার জন্য অস্ত্র-বিস্ফোরক বহনের দায়ে এই যমজ দুই ভাইকে ২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লির পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরে। ২১ আগস্ট আক্রমণে অংশ নেওয়া আরেকজন মুফতি আহসান উল্লাহ ওরফে কাজল একই বছরের ৮ মার্চ দিল্লির পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। কাজল ভারতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি ইয়াজদানির সঙ্গে নিহত হন বলে ভারতীয় পত্রিকায় খবর বের হয়েছে।
মুফতি হান্নানসহ হরকাতুল জিহাদের বেশির ভাগ নেতাই আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁদের সঙ্গে আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের পাশাপাশি ভারতে তত্পর জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গেও যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে, তা এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মুফতি হান্নান ও গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এটা পরিষ্কার যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা করা। অথচ আমরা দেখেছি, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পক্ষ থেকে এমন অবিশ্বাস্য কথাও প্রচার করা হয়েছিল যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বই জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে ওই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল, গ্রেনেড হামলা এমনভাবে করা হয়েছে, যেন শেখ হাসিনা বেঁচে যান এবং জোট সরকারকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা যায়। দেশে একটি চরম অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয় এবং জনসমর্থন ও সহানুভূতি আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়। তখন এ ধরনের বক্তব্য কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি।
মনে পড়ে, ২১ আগস্টের ঘটনার কিছুদিন পর তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এই প্রতিবেদককে প্রায় একই রকম কথা বলেছিলেন। তিনিও বলেছিলেন, এটা আওয়ামী লীগেরই কাজ। এ ঘটনায় তারাই তো লাভবান হবে। তারা সহানুভূতি পাবে। এমনকি ঘটনার আগমুহূর্তে শেখ হাসিনা আইভি রহমানকে মঞ্চে ডেকে নিতে চেয়েছিলেন। সে কথাও তিনি বলেছিলেন। শেখ হাসিনার জ্ঞাতসারেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে ওই পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেছিলেন। পাকিস্তানি হাইকমিশনার ও বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে কী আশ্চর্য মিল!
২১ আগস্টের ঘটনাবলির পরপরই দুই নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়েছিল।
মনে আছে, ২৫ আগস্ট অপরাহ্নে বেগম জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দীর্ঘ আলোচনার সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। সে সময় খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণে পত্রিকার সম্পাদকেরা তাঁর সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেছিলেন।
বেগম জিয়া শুরুতেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আপনি মনে করেন? আমার সরাসরি উত্তর ছিল, ‘সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের পক্ষে বলা মুশকিল। তবে হরকাতুল জিহাদ, ভারতের আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকারীদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টি প্রভৃতি এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকতে পারে। তারা পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে বলেও শোনা যায়।’
বেগম জিয়া শুরুতেই ‘ফ্রিডম পার্টির এখন আর অস্তিত্ব নেই’ বলে তাদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। কিন্তু হরকাতুল জিহাদ ও উলফা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। আমার এখনো মনে পড়ে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেই আলোচনাটি ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, তর্ক-বিতর্কও হয়েছিল বেশ। সেদিন অপরাহ্নের আলোচনায় বেগম জিয়া বারবার আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করা হবে এবং কিছুতেই ১৯৯৬ সালের অবস্থা তৈরি করতে দেবেন না বলে জানিয়েছিলেন।
ঘটনার চার দিন পর ২৬ আগস্ট সকালে দেখা হয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতৃত্বের প্রতি নৃশংস হামলার ঘটনায় সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশই ছিল ওই সাক্ষাতের উদ্দেশ্য। তখন স্বাভাবিক কারণেই শেখ হাসিনা গভীরভাবে ব্যথিত ছিলেন। আহত নেতা-কর্মীরা আসছিলেন তাঁর কাছে। একটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছিল সুধা সদনে। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ ছিল, ‘তারেক রহমান আর বাবর এবং হাওয়া ভবনের তাঁর সঙ্গীরা হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাঁরাই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমাকে হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করাই ছিল এই হামলার উদ্দেশ্য।’
তখন গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ ছাড়াও প্রতিবেশী ভারতের প্রতিও অঙ্গুলিনির্দেশ করা হয়েছিল। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া দাবি করে ওই সব মিথ্যা তথ্য জোট সরকারের সমর্থক পত্রপত্রিকায় প্রচারও করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমর্থক কতিপয় লেখক ও বুদ্ধিজীবী সভা-সেমিনারে একই সুরে বক্তব্য দিয়ে, পত্রিকায় কলাম লিখে সেই মিথ্যা প্রচারে সহায়তাও করেছিলেন।
এ ছাড়া ২১ আগস্ট হামলার পরপর গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনেও ওই হামলার সঙ্গে প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে কমিশন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ব্রি. জে. আবদুর রহিমও একই কথা বলেছেন। আসলে সেসবই হয়েছিল ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’।
জানা যায়, জোট সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার তখনকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছিলেন নানা মহলে। গণমাধ্যমকেও বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করেছিলেন যে কলকাতায় পলাতক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের পরিকল্পনায় ১৪ জনের একটি দল এই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। আর, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতের বসিরহাট থেকে গ্রেনেড এনেছিল ঢাকার বাড্ডার সন্ত্রাসী মুকুল। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার রাজধানীর মগবাজারের আওয়ামী লীগের নেতা মোখলেসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে সাংবাদিকদের জানান, সিআইডির কর্মকর্তারা তাঁকে রাজসাক্ষী বানানোর কথা বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
একইভাবে তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে ২০০৫ সালের জুন মাসে জজ মিয়া নামের এক ভবঘুরেকে নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই জজ মিয়াকে দিয়ে সিআইডি তখন আদালতে কথিত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে। তাতে নাকি জজ মিয়া বলেছিলেন, সামান্য টাকার বিনিময়ে সুব্রত বাইনের পরিকল্পনা ও নির্দেশে তিনি নিজেসহ ১৪ জনের একটি দল এই গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিল। তবে ওই জবানবন্দিতে জজ মিয়া বলেছিলেন, এর আগে তিনি গ্রেনেড কী জিনিস চোখে দেখেননি। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে খালি জায়গায় বসে কীভাবে গ্রেনেড ছুড়তে হয়, কীভাবে হামলা করতে হবে, তা সুব্রত বাইনরা বলে দিয়েছিল এবং সেভাবে হামলা করা হয়েছিল।
সিআইডি ও পুলিশের ‘জজ মিয়া উদ্ভাবন-তত্ত্ব’ আমরা তখনই নাকচ করেছিলাম। এবং শিশির ভট্টাচার্য্যের একটি কার্টুনসহ প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জজ মিয়ার কাহিনিকে ‘আষাঢ়ে গল্প’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল (২৯ জুন, ২০০৫; দেখুন পৃষ্ঠা ১৫)। এর পরপরই এক সামাজিক অনুষ্ঠানে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আমাদের বলেছিলেন, ‘আষাঢ়ে গল্প বলছেন আপনারা, আমরা সত্য প্রকাশ করে প্রমাণ করে দেব, কীভাবে সীমান্তের ওপার থেকে পরিকল্পনা হয়েছে, কীভাবে সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সঙ্গীরা এই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে।’
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পটপরিবর্তনের পর পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জোট আমলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তখন বলার চেষ্টা করেছেন যে পুলিশ ও সিআইডি তাঁদের ভুল বুঝিয়েছিল।
সর্বশেষ যেসব তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে আমাদের সন্দেহই সত্য বলে প্রমাণিত হলো। এটা এখন প্রায় পরিষ্কার যে তত্কালীন জোট সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইডি ও পুলিশের তখনকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা পেশাদার খুনি চক্র, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং ভারতের ওপর এই হামলার দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলার আলামত নষ্ট করা হয়েছিল। তত্কালীন সরকারের আহ্বানে বিদেশ থেকে আসা ইন্টারপোল ও এফবিআইয়ের বিশেষজ্ঞদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। অবশ্য বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আনাটা ছিল লোক দেখানো একটি কৌশল মাত্র।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শে জজ মিয়াকে দিয়ে ‘আষাঢ়ে গল্প’ সাজাতে পুলিশ ও সিআইডির তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্ট সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ সহায়তা করেছেন। এরপর তদন্তের দায়িত্বে আসা সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমানও জেনেবুঝে পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করেন। এখন সিআইডির এই তিন কর্মকর্তাই অবসরে আছেন। কেন মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে সাবেক এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের শেষ কী হলো জানা যায়নি।
একই সঙ্গে এটাও তদন্ত হওয়া উচিত, জোট সরকারের শাসনামলে মুফতি হান্নানকে বিভিন্ন মামলায় টানা ১৪৫ দিন রিমান্ডে রেখে কারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য কেন, কার নির্দেশে বা কিসের বিনিময়ে গোপন রাখা হয়েছিল; এসবের নেপথ্যে কারা কারা ছিলেন, সেসবও এখন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
সম্প্রতি প্রথম আলোর অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জোট সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাকে সে সময়ে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে তদন্ত করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তত্কালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক ও সরকারের পছন্দের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের দিয়ে ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যমূলক তদন্ত করিয়েছিলেন। আসলে কোনো তদন্তই করা হয়নি। এসব তথ্যের পটভূমিতে এখন যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, তাহলে কি ২১ আগস্টের হামলার সঙ্গে জোট সরকারের উচ্চপর্যায়ের যোগসাজশ ছিল? এখন তো সে রকম তথ্য বের হয়ে আসছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে।
এটা সত্যি বিশ্বাস করা কঠিন যে বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকার ও নেতৃত্ব কীভাবে তাঁদের বিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করতে, কী নির্লজ্জভাবে সত্যকে উল্টো পথে পরিচালনা করতে পারেন! এভাবেই উগ্র জঙ্গিদের একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে লুকানো বা ভিন্ন পথে পরিচালনা করতে জোট সরকার সচেষ্ট ছিল। এই সবকিছু তো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অজ্ঞাতে হতে পারে না। এর দায় এড়াতে পারেন না বিএনপির নেতৃত্ব। এসব ঘটনা জাতির জন্য একটি ভয়ংকর কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবেই বিবেচিত হবে।
আমরা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করে দ্রুত বিচার ও প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। একই সঙ্গে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাই।
মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো।

NSI Chief Visited Tarek Zia Before Grenade Attack

The Daily Star

Monday, January 14, 2013

August 21 Grenade Attack

Ex-NSI chief in the dock

Hospitalised yet went to Hawa Bhaban days before attack


Abdur Rahim

A few days before the August 21 grenade attack on an Awami League rally, the then NSI boss Abdur Rahim visited Hawa Bhaban, the alterative powerhouse of the previous BNP-led government, while he was receiving treatment in a military hospital in Dhaka.

Yousuf Hossain, a National Security Intelligence (NSI) official, yesterday said this in his testimony to a Dhaka court as a prosecution witness against his former boss Brig Gen (retired)
Rahim in two cases filed in connection with the grenade attack.

Rahim, who stood in the dock during the testimony, looked angrily at Yousuf.

Rahim was the NSI director general when the grenade attack was made on an AL rally on August 21, 2004 to assassinate Sheikh Hasina, the then leader of the opposition. Yousuf, who was a field officer of NSI, is now an assistant director of the organisation.

Rahim had been admitted to the Combined Military Hospital (CMH) in Dhaka cantonment with piles on August 12, nine days before the grenade attack. And Yousuf was one of the three NSI officials responsible for taking care of their boss by turns.

"The DG sir [Abdur Rahim] went to Hawa Bhaban a day between August 12 and 21 in 2004 while receiving treatment at the Combined Military Hospital," said Yousuf in his deposition as the 66th prosecution witness of the cases before Dhaka Speedy Trial Tribunal.

The then NSI chief returned to the hospital from Hawa Bhaban and received treatment there till August 25.

Soon after the grenade attack on an AL rally at Bangabandhu Avenue, Yousuf learnt about it over his walkie-talkie.

He was told that AL leader Ivy Rahman and many other activists were killed in the attack. Yousuf then conveyed the message to then NSI chief Rahim.

"DG sir then asked me who were the other leaders that got killed?" Yousuf told the court.

When Yousuf informed his boss about the attack, Rahim specifically wanted to know what happened to Sheikh Hasina, the NSI official said at the court.

In reply, Yousuf told him that Hasina narrowly escaped death, but she sustained injuries to her left ear.

A few hours later, at around 7:00pm, two journalists went to Rahim's cabin in the hospital. The then director of Directorate General of Forces Intelligence (DGFI) Brig Gen Rezzakul Haider Chowdhury was also in the cabin at that time, said Yousuf who was outside Rahim's cabin.

Yousuf said the two journalists left Rahim's cabin after 15 minutes.

"When they [two journalists] were coming out of the cabin, I heard them discussing that the grenade attack had been carried out following a feud between Sheikh Hasina and Sheikh Selim, and such news would not be acceptable to public at all," said Yousuf.

After an hour, Rezzakul left the cabin, said Yousuf.

The NSI official told the court that he took care of Rahim for three more days after the August 21 attack.
      
Judge Shahed Nuruddin recorded Yousuf's statement and fixed today for his cross-examination by defence.

Twenty-four people, including Ivy Rahman, wife of President Zillur Rahman, were killed and hundreds of party activists and leaders were injured in the grenade attack at Bangabandhu Avenue on August 21, 2004.

Two cases -- one under the explosive substances act and the other for killing -- were filed in connection with the incident.

Source: https://www.thedailystar.net/news-detail-265113

Ex-BNP MP Akhtaruzzaman on 21 Aug Grenade Attack

Prothom Alo

 

 

 

 

বিএনপির সাবেক সাংসদ আখতারুজ্জামান

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় খালেদা ও তারেক এড়াতে পারেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২১-০৮-২০১০
বিএনপির সাবেক সাংসদ আখতারুজ্জামান বলেছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তাঁর ছেলে তারেক রহমান ছিলেন বাবরের নিয়ন্ত্রক। তাঁরা কীভাবে এবং কোন যুক্তিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়িত্ব থেকে রেহাই পাবেন?
আজ শনিবার সন্ধ্যায় মহাখালীর ডিওএইচএসের নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতারুজ্জামান এ কথা বলেন।
আখতারুজ্জামান বলেন, কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে জাতীয় নেতাদেরসহ নিরীহ জনগণ ও রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত হয়, তাহলে তারা যত ক্ষমতাশালী ও বড় রাজনৈতিক দলের নেতাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। অপরাধের বিচার থেকে কেউ রক্ষা পেয়ে গেলে সে সমাজে বা দেশে হত্যা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান হবে না। তাই অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তত্কালীন প্রধান ও তাঁর অধীন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানান আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, যাঁরা বাবরের ইশারায় চলতেন, তাঁরা এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব এবং এর সঙ্গে জড়িত থাকার কথা কি অস্বীকার করতে পারবেন?

Sunday, October 4, 2015

5 May Shapla Chottor - How did BNP Jamaat Hefazat come up with 3,000 Dead?


৫ই মে শাপলা চত্বর - বিনপি, জামাত ও হেফাজত ৩,০০০ মৃত সংখ্যাটি কিভাবে পেল?

মাঝে মাঝে মনে হয় অদ্ভূত আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশে অনেক সত্য যেমন আছে আবার তেমনি তার সাথে পাল্লা দিয়ে মিথ্যাও সমান তালে চলে। ভালো খারাপ কোন কিছু ঘটার সাথে সাথে আমরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ি। তার সাথে যদি যোগ হয় আমাদের প্রিয় দলের কোন নেতার বক্তব্য তাহলে ত কথাই নেই, সেটা যত মিথ্যাই হোক তাকে মহাসত্যে রুপ দেয়া আমরা গুরু দায়িত্বের মধ্যে গন্য করে ফেলি। দেশের একটি বড় অংশের কাছে গুজব খুব একটি প্রিয় জিনিস। গুজব ছাড়া তাদের দিন যেন চলতেই চায় না। আর গুজব যদি হয় আমাদের অপ্রিয় দলটিকে নিয়ে তাহলে ত কথাই নেই। এটিকে ডালপালা মেলে যত দ্রত যত মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলেই পরম শান্তি। 

সাভারে মনুষ্যসৃষ্ট ভয়াবহ ট্র্যাজেডির রেশ সামান্যতমও কাটে নি তার মধ্যে জোর করে মানবতার দাবি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হেফাজতে ইসলাম তাদের ৫ই মে'র অবরোধ কর্মসূচী পালন করল। অনেক সংগঠন তাদের কর্মসূচী স্থগিত করল, কিন্তু হেফাজত শত অনুরোধ প্রত্যাখান করল। এতে মানুষের মধ্যে তাদের প্রতি একটা অশ্রদ্ধার জন্ম নিল কিনা তারা খোজ নিয়ে দেখতে পারেন। কয়েকদিন পিছিয়ে দিলে তাদের মনে হয় মহাক্ষতি হয়ে যেত। তাদের সজ্ঞা অনুযায়ি যারা নাস্তিক তাদের ফাসি দেওয়াটা তখন মারাত্মক জরুরি হয়ে পড়েছিল। যুদ্ধাপরাধিদের দল জামাতের ফাদে পড়লে ইহকাল পরকাল দুটোই মাটি হয়ে যেতে পারে হেফাজতকে তাদের পরবর্তি কর্মসুচীর আগে একটি বার হলেও তা ভেবে দেখার সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। বিনপি সাভার ট্র্যাজেডির প্রতি সম্মান দেখিয়ে যেখানে নিজেদের পূর্ব ঘোষিত হরতাল প্রত্যাহার করল, তারাই আবার হেফাজতের কর্মসূচীকে পুর্ণ সমর্থন দিয়ে যা করল তা কি জনগনের সাথে প্রতারনা নয়? হেফাজতের কর্মসুচীর ভেতর বিনপি জামাতের সরকার উৎখাতের একটি গোপন পরিকল্পনা ছিল বলেই মনে হয়। দিনভর অবিশ্বাস্য ও ভয়াবহ তান্ডবের পর হেফাজত যখন হঠাৎ করে মতিঝিলে অবস্থান কর্মসূচী ঘোষনা করে বসে তখন আপামর জনসাধারন আতংকিত হয়ে পড়ল। দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রস্থল থেকে এদের উচ্ছেদ করা ছাড়া সরকারের আর কোন উপায় ছিল না। নিরাপত্তা বাহিনীদের যৌথ অভিযানে এত অল্প সময়ে হেফাজতিরা যে পালিয়ে যাবে তা ছিল সবার ধারনাতিত। যারা মরলে শহীদ বাচলে গাজী মন্ত্রে দীক্ষিত, শহীদ হওয়ার জন্য একপায়ে খাড়া, শহীদ হওয়াকে পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে করে তারা যে এভাবে বিনপি-জামাতের মনে নিদারুন কষ্ট দিয়ে রনে ভঙ্গ দিবে তা ছিল কল্পনার বাইরে। তবে পুরো দেশবাসির সাথে প্রবাসিরাও হাফ ছেড়ে বাচল।

এই সরকারের অনেক অযোগ্যতা, ব্যর্থতার মধ্যে এই অপারেশন শাপলা চত্বরটি দারুন সফল অভিযান। যার অনুমতি ছাড়া একটি পাতা পর্যন্ত নড়ে না তাকে আল্লাহ খোদা ইশ্বর বিধাতা যে নামেই ডাকি না কেন, তিনি একটি পক্ষকে বিশেষ অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন সে রাতে। কিন্তু এই সফল অপারেশনে বিরোধিদল যে ভীষন নাখোশ তাদের বড় বড় নেতাদের বক্তব্যগুলো তা প্রমান করছে। এমকে আনোয়ার বললেন এই অপারেশনে সরকার ২,৫০০ হেফাজতিকে গনহত্যা করেছে। পরেরদিন সাদেক হোসেন খোকা আরো এক কাঠি বাড়িয়ে বললেন ৩,০০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নাকি বিবিসি ও সিএনএন পড়ে জেনেছেন এই সংখ্যাটি। প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবরে রিপোর্টার লিখলেন তিনি তন্ন তন্ন করে বিবিসি ও সিএনএন এ সংখ্যাটি খুজে পান নি। বিবিসে নিউজে বলছে ২৭ জন মারা গেছে ৫ ও ৬ই মে দুইদিনে সারা দেশ জুড়ে। বাংলাদেশ ইসলামিস্ট ব্যাটল পুলিশ শিরোনামে সিএনএন রিপোর্টে বলছে ৪ জন মারা গেছে।


কালের কন্ঠের ১৬ই মে'র অনুসন্ধানী রিপোর্টে কাউকে নিখোজঁ খুজে পাওয়া যায়নি। হেফাজতের দাবিকৃত মৃত ছাত্র চাদঁপুরে ক্লাস করছে - একইদিনের ইত্তেফাকের খবর। কালের কন্ঠের ১৮ই মে'র "নিখোঁজের কোনো প্রমান খুজেঁ পাচ্ছে না হেফাজত" শিরোনামের রিপোর্টে বলছে ৩,০০০ নিখোঁজ প্রমানে মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় অনুসন্ধান চালিয়ে সাত দিনে একজনকেও নিখোঁজ পায়নি সংগঠনটি। এছাড়া ১৭ই মে'র প্রথম আলোর খোলা কলমে লেখা "নূরে আলমের জন্য শুভকামনা" শিরোনামে লেখাটিও বিনপি জামাত ও হেফাজতিদের দাবির সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হিউমেন রাইটস ওয়াচ বলছে বিরোধিদলের গনহত্যার দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তাদের মতে ৫০ জনের মত মৃত হতে পারে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের মে'র ৮তারিখ “শাপলা চত্বর এন্ড এক্ট অব হুডিনি” শিরোনামে প্রথম পাতার আর্টিকেলে রিপোর্টার জোরালো যুক্তির মাধ্যমে দেখিয়েছেন কেন এত অল্প সময়ের মধ্যে ৩,০০০ মানুষকে মেরে একেবারে গায়েব করে দেয়া সম্ভব নয়।


তবে আমার যেটি ধারনা তা হলো বিরোধিদলগুলোর ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত দেশে বা প্রবাসে কম্পিউটার পারদর্শি (উদাহরন হিসেবে শিবির ক্যাডারদের বাশের কেল্লার কথা মনে করুন) এমন কেউ সিএনএন আইরিপোর্টে একাউন্ট খুলে বাংলাদেশে ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ লোককে গনহত্যা করা হয়েছে বলে বেশ কিছু জালিয়াতি লেখা পোস্ট করে দিয়েছে। সিএনএন আইরিপোর্টে যে কেউ একাউন্ট খুলে যা তা লিখতে পারে। এগুলো সিএনএন এর সাংবাদিকদের বানানো বস্তুনীষ্ঠ রিপোর্ট নয়। স্রেফ ব্লগের মত। এদের প্রতিটির সাথে "নট ভেটেড বাই সিএনএন" (সত্যতা পরীক্ষা করা হয়নি) ট্যাগ লাগানো থাকে যা পাঠককে স্মরন করিয়ে দেয়ার জন্য যে এগুলো সিএনএন এর সাথে যুক্ত নয় এমন কিছুলোকের ব্যক্তিগত লেখা। এমনকি এই ব্লগগুলোর নীচে যে বাংলাদেশিরা কমেন্ট লিখছেন তাদেরও অনেকে মনে করছেন এগুলো সিএনএন এর রিপোর্টারদের করা খাটি রিপোর্ট। এখন বিরোধিদলের বড় বড় নেতারা যদি এগুলোকেই বলে সিএনএন থেকে প্রাপ্ত তথ্য, তাহলে সেটি হবে ভীষন লজ্জার। তারা ধরে নিয়েছেন যে দেশের মানুষ খুব অজ্ঞ, এটা ধরা তাদের জন্য কঠীন। তাদেরও পুরো দোষ দেয়া যায় না, যা তা গেলার জন্য দলকানা বহু লোক আছে। আর সরকারও এত দুর্বল আর অকর্মন্য যে বিরোধিদলগুলোর মিথ্যা প্রচারনার যুতসই জবাব দিতে পারছে না। শিবিরের কিছু কম্পিউটারভিত্তিক ক্যাডারের মিথ্যা প্রপাগান্ডার কাছে সরকার হেরে যাচ্ছে বারবার। মজার ব্যাপার হলো যারা গনহত্যা হয়েছে বলে দাবি তুলছে তারা কোন জোরালো প্রমান দেখাতে দেখাতে পারছে না। তাই তারা বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে। তারা ২০১০ সালে হাইতির ভূমিকম্পে নিহতদের সারিবদ্ধ লাশের ছবি শাপলা চত্বরের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এমনকি ১৯৭৮ সালের সংঘটিত জোনসটাউনে শয়ে শয়ে গন আত্মহত্যাকারিদের লাশের ছবিও একাজে ব্যবহার করেছে।


যারা গনহত্যা হয়েছে দাবি করছে তারা খুব সরল একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। সাভারে হাজারের উপর মৃতের জন্য যত লোক জড়ো হয়েছিল এতদিন ধরে, সে হিসেবে ৩,০০০ হেফাজতির লাশ যদি সরকার গুম করে থাকে তাহলে কত হাজার লোকের মৃত আত্মিয়ের খোজে হন্যে হয়ে খোজার কথা? কেউ একজনও কেন এতদিনে এগিয়ে এল না নিখোঁজ আত্মিয়ের খোজে? সরকার থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ৩,০০০ মৃত ব্যক্তির নাম ঠিকানার লিস্ট জমা দিতে বিরোধিদলের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে। সেই ৪৮ ঘন্টা অনেক আগে পেরিয়ে গেছে। লিস্টের নামগন্ধটি নেই। তবে নানাজন নানাধরনের যুক্তি দেখাচ্ছে তাদের নেতাদের দাবি অনুযায়ি গনহত্যা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মৃত ৩,০০০ সবাই নাকি এতিম ছিল সেজন্যেই নাকি কেউ এগিয়ে আসছে না।  তারা এমনই এতিম তাদের ১৪ গুষ্ঠিতে কেউ নেই, মামা চাচা খালা ফুফু কেউ নেই! তাদের একজনেরও কোন একটি গ্রামে ঠিকানা পর্যন্ত নেই! যদি তা সামান্যতম সত্যি হয়, তাহলে কি দাড়াল যে এরকম সব অসহায় এতিমদের দিয়ে হেফাজত চলে? এই অসহায় এতিমদেরকে বিনপি, জামাত, হেফাজত জঘন্যভাবে ধোকা দিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল? এটি কি এক ধরনের অপরাধ নয়?


বলা হচ্ছে হেফাজতের ৩,০০০ নেতা ও কর্মি মারা গেছেন। কর্মিদের বাদ দিলাম, তাদের কোন নেতাটি মারা গেছেন তা আমাদের বলবেন কি? জনগন জানে হেফাজতি নেতারা কোথায় ছিলেন ৫ই মে'র রাতে। তারা অভিযানের খবর পেয়েই হোক অথবা আরাম আয়েশে খাওয়া দাওয়া ঘুমের জন্যই হোক, মতিঝিলে অবস্থান ঘোষনা দিয়ে নীরিহ শিশু কিশোরদের একা ফেলে পালিয়ে চলে গিয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলে পরকালে মুসলমানের কি শাস্তি কওমি হুজুররা সেই সহীহ হাদিসটি কি জানেন না? বলা হচ্ছে সরকার কেন সব বাতি নিভিয়ে অন্ধকার করে ফেলল। ভয় দেখানো বা আতংকিত করার জন্য এটি একটি কৌশল হতে পারে। সেটা যে দারুন কাজে লেগেছে ফলাফলই তা প্রমান করে।


হেফাজতের এক কথা ইসলামের অবমাননা বন্ধ করতে হবে (রাজাকারদের বিচার চাওয়াও যে তাদের কাছে ইসলাম অবমাননার সামিল সেটা মুখ ফুটে বলতে তাদের শরম লাগে)। তারা যে ভয়াবহ তান্ডব চালিয়ে কোরান শরিফ পুরিয়ে অসংখ্য গরীব মানুষের সর্বনাশ করে পবিত্র ইসলাম ধর্মের চরম অবমাননা নিজেরাই করল সে সামান্য জিনিসটা বোঝার ক্ষমতা কি তাদের আছে? কোন মুসলমান যদি তাদের এই জঘন্য কুকর্ম দেখে ধর্ম থেকে দুরে সরে যায় তার জন্য যে তাদের পরকালে রোজ হাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে সেটা কি তারা জানে না? দৈনিক আমার দেশের কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনের ছবি জালিয়াতি করে মিথ্যা খবর প্রকাশ করা কি ধর্মের অবমাননা নয়? কিংবা ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেলের বিবৃতিকে সম্পূর্ন বিকৃত করে হেফাজতিদের আরেক পত্রিকা দৈনিক নয়া দিগন্তের মার্চের ৮ তারিখে "বিতর্কিত ট্রাইবুনাল বাতিল করুন" শিরোনামে ভুয়া খবর প্রকাশ করা কি কোন ধর্মপ্রান মুসলমানের কাজ? যারা বা যে দলের লোকজন সাঈদীর ছবি ফটোশপের মাধ্যমে জালিয়াতি করে তাকে চাদে দেখা গেছে বলে উসকানিমূলক প্রচারনা করে বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ দাঙ্গা লাগালো, এ সম্বন্ধে হেফাজতের বক্তব্য কি? এব্যাপারে অনেকে সোচ্চার হলেও রহস্যজনক কারনে হেফাজতিরা সম্পূর্ন নীরব। অথচ এটি ছিল এক ধরনের কুফরি ও ধর্মের চুড়ান্ত অবমাননা। ইসলাম ধর্মের অবমাননা করার কারনে এদের ফাসির দাবি কেন হেফাজতিরা করছে না?


দুটি বিষয়ের অবতারনা করে লেখাটি শেষ করতে চাই। ২৭, ৫০ নাকি ৩,০০০ এর মত মারা গিয়েছিল সেদিন এই সংখ্যা বিতর্কের বাইরে যেয়ে কেউ আলোচনা করছে না যে একজন হেফাজতির কাছে শহীদ হওয়া পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। তারা সবাই সেদিন শহীদ হওয়ার নিয়তে জেহাদি জোশে সরকার পতনের লক্ষে ঢাকা দখল করতে এসেছিল। তাদের ভাষ্যমতে যে ৩,০০০ নিহত হয়েছে, তাদের জীবন ধন্য ও স্বার্থক। আরেকটি ব্যাপার এখানে ভেবে দেখার তা হলো আল্লাহ না করুক হেফাজতিরা যদি সেদিন সরকার পতনে সফল হয়ে নিজেরা সরকার গঠন করত, আজকে নতুন আরেকটি তালেবান রাষ্ট্রের সূচনা হত বিশ্বের বুকে। তখন দৈনিক না হোক, সপ্তাহ বা মাসে তিন চার হাজার লোক গ্রেনেড বোমায় উড়ে যেয়ে বা গুলি খেয়ে মরে যাওয়া একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিনত হত। বাংলাদেশ আরেকটি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে পরিনত হোক আমরা কেউ ভয়ংকর দুঃস্বপ্নেও তা কামনা করি না।