লেখক: ইত্তেফাক ডেস্ক | বৃহস্পতি, ৬ অক্টোবর ২০১১, ২১ আশ্বিন ১৪১৮
সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
ক্ষমতার মেয়াদের শেষে দিকে এসে বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ‘নজিরবিহীন’ মাত্রার দুর্নীতিতে নিমগ্ন হয়ে পড়েছে। অনেকের লোভের মাত্রা বাড়তেই আছে। বাড়ছে আসন্ন নির্বাচনের প্রচার অভিযানে খচর করার জন্য টাকা সংগ্রহের অভিযান। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্র ছাড়াও তার মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা সরাসরি ‘কমিশন বাণিজ্যে’ জড়িয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন টেন্ডার কিংবা সরকারি কেনাকাটা থেকে ‘কমিশন’ নিচ্ছেন তারা।
ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট মার্কিন সরকারের কাছে পাঠানো এক তারবার্তায় এসব কথা লেখেন। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা আড়াই লক্ষাধিক তার-বার্তার মধ্যে ‘গোপনীয়’ শ্রেনীভুক্ত ঢাকার এই তারবার্তাটিও আছে। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ের পরিস্থিতি উল্লেখ করতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওই তারবার্তাটি পাঠান।
প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস গোপন তারবার্তায় আরো লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবার এবং কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যরা ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন। কোনো রকম আইনি শাস্তির আশঙ্কা না করেই তারা দুর্নীতি ও অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের দেখাদেখি মাঠপযায়ের সর্বস্তরে ‘ছিঁচকে’ দুর্নীতির ঘটনাও বেড়ে গেছে। কারণ, নিম্নপদস্থ কর্মচারী কর্মকর্তারা এখন দুনীতির ব্যাপারে নিজেদেরকেও অনেকে ‘ঝুকিমুক্ত’ মনে করছেন।
বিউটেনিস তারবার্তায় আরো লেখেন, ২২৩ মিলিয়ন ডলারের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ভিসার টেন্ডারের পুনরুজ্জীবনের ঘটনা বিএনপি আমলে সম্ভবত সবচে বড় প্রশ্নবিদ্ধ প্রোজেক্ট। এছাড়া কেবিনেট কমিটি গত ২১ আগস্ট (২০০৬) আরো ১২২ মিলিয়ন ডলারের ১৯ প্রোজেক্ট নিয়ে আলোচনা করে দুটি বাদে সবগুলোর অনুমোদন দিয়েছে। অথচ এগুলোর প্রতিটি নিয়ে মারাত্মক অনিয়মের অভিযোগ আছে।
সাবেক সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের তারবার্তার ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রীর দুই পুত্র এবং সিনিয়র মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনরা সরাসরি কমিশন বাণিজ্যে জড়িত। প্রশ্নবিদ্ধ এসব প্রোজেক্ট অনুমোদনে তাদের ভূমিকা আছে। তারা বড় মাত্রায় ‘কমিশন’ নিয়ে এসব প্রশ্নবিদ্ধ প্রোজেক্ট বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং প্রভাবশালী মন্ত্রীদের পুত্ররা এভাবে বিভিন্ন প্রোজেক্টে নিজেদের জড়িয়ে জোট সরকারে দুর্নীতির বিস্তারে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করেছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে প্রথম স্থান দিলেও কারো হুশ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।