জোট আমলে বারবার সাজানো তদন্ত
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় শুরু থেকেই হোতাদের আড়াল করতে তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তদন্তের নামে বিভিন্ন সময় নানা ‘আষাঢ়ে গল্প’ হাজির করে প্রথম থেকেই বিষয়টিকে বিতর্কিত করার কাজ শুরু হয় সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে।
তখন জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সাংসদ জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে বক্তৃতা-বিবৃতিতে হামলার শিকার আওয়ামী লীগের দিকেই সন্দেহের আঙুল তোলে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভারতকেও দায়ী করেছিল। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার নেপথ্যে তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর ছাড়াও জোট সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কারও কারও ভূমিকা ছিল বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে। প্রথমে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। কয়েক দিন পর মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তরিত হয়।
পার্থকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন: শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানোর অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৫ আগস্ট শৈবাল সাহা পার্থ নামের নিরীহ এক যুবককে ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পার্থ যেহেতু ভারতে লেখাপড়া করেছেন, তাই তাঁকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে প্রমাণের জন্যও তখন অসামরিক একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয় এবং জোট সরকারের সমর্থক বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রচার করা হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে জামিন পেয়ে সাত মাস পর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন পার্থ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে টানা পাঁচ দিন চোখ বেঁধে রাখা হয়। ব্যাপক নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ধানমন্ডি থানায় সোপর্দ করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার: ঢাকার মগবাজার এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোখলেছুর রহমানকেও এই মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁকে দুই দফা রিমান্ডেও নেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডি পুলিশ গ্রেনেড হামলায় তাঁকে জড়াতে না পেরে সাক্ষী হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল।
জজ মিয়া উপাখ্যান: ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে সিআইডি আটক করে। ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে ২৬ জুন জজ মিয়াকে দিয়ে আদালতে সাজানো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। কথিত এই জবানবন্দিকে ভিত্তি করে তদন্তের নামে ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রচার করেছিলেন মামলার তত্কালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ও তত্কালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। তাঁরা ওই বছরের নভেম্বরে আবুল হাসেম রানা ও শফিক নামের আরও দুই যুবকের কাছ থেকে প্রায় একই রকম সাজানো জবানবন্দি আদায় করেন।
সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও ওই সাজানো ছকে কথিত তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই গল্প সাজানোর ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন। তিনি প্রথম আলো ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাত্কারে বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সিআইডি তাঁর পরিবারকে মাসে মাসে ভরণ-পোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি।
২০০৮ সালের ১১ জুন অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তত্কালীন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি) জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, অতীতে মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সঙ্গে জড়িত সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা (রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই তিন কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন। পরে এই তিনজনের বিরুদ্ধে সিআইডি বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন।
তখন জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সাংসদ জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে বক্তৃতা-বিবৃতিতে হামলার শিকার আওয়ামী লীগের দিকেই সন্দেহের আঙুল তোলে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভারতকেও দায়ী করেছিল। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার নেপথ্যে তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর ছাড়াও জোট সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কারও কারও ভূমিকা ছিল বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে। প্রথমে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। কয়েক দিন পর মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তরিত হয়।
পার্থকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন: শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানোর অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৫ আগস্ট শৈবাল সাহা পার্থ নামের নিরীহ এক যুবককে ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পার্থ যেহেতু ভারতে লেখাপড়া করেছেন, তাই তাঁকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে প্রমাণের জন্যও তখন অসামরিক একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয় এবং জোট সরকারের সমর্থক বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রচার করা হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে জামিন পেয়ে সাত মাস পর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন পার্থ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে টানা পাঁচ দিন চোখ বেঁধে রাখা হয়। ব্যাপক নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ধানমন্ডি থানায় সোপর্দ করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার: ঢাকার মগবাজার এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোখলেছুর রহমানকেও এই মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁকে দুই দফা রিমান্ডেও নেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডি পুলিশ গ্রেনেড হামলায় তাঁকে জড়াতে না পেরে সাক্ষী হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল।
জজ মিয়া উপাখ্যান: ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে সিআইডি আটক করে। ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে ২৬ জুন জজ মিয়াকে দিয়ে আদালতে সাজানো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। কথিত এই জবানবন্দিকে ভিত্তি করে তদন্তের নামে ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রচার করেছিলেন মামলার তত্কালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ও তত্কালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। তাঁরা ওই বছরের নভেম্বরে আবুল হাসেম রানা ও শফিক নামের আরও দুই যুবকের কাছ থেকে প্রায় একই রকম সাজানো জবানবন্দি আদায় করেন।
সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও ওই সাজানো ছকে কথিত তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই গল্প সাজানোর ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন। তিনি প্রথম আলো ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাত্কারে বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সিআইডি তাঁর পরিবারকে মাসে মাসে ভরণ-পোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি।
২০০৮ সালের ১১ জুন অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তত্কালীন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি) জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, অতীতে মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সঙ্গে জড়িত সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা (রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই তিন কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন। পরে এই তিনজনের বিরুদ্ধে সিআইডি বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন।